এম. বেদারুল আলম :: কক্সবাজার সদরের পিএমখালীর আলতাজ মিয়া মালয়েশিয়া থেকে ফিরতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশের দূতাবাসে সকল ডকুমেন্ট দিয়ে আবেদন করেছিলেন ৫ মাস আগে। সকল কাগজপত্র অনলাইনে প্রেরণের পর কুয়ালালামপুরে গিয়ে দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। সকল ডকুমেন্ট পাওয়ার পরও দূতাবাসের দায়িত্বরতরা ফিরে আসার জন্য কোন ধরনের সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ তার। উল্টো বকা দিয়ে দূতাবাস ছাড়তে বাধ্য করেন সুজন নামের এক কর্মকর্তা।
টাকা দিলে অনেকে কাগজপত্র ও সার্বিক সহযোগিতা পায় টাকা না দিলে হয়রানীর শিকার হতে হয়-এমন অভিযোগ দেশে ফেরত ইচ্ছুক খুটাখালীর আয়ুবুল ইসলাম নামের অপর যুবকের। তিনি বলেন, যারা দালালের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে লাইন ঠিক করে তারাই সফল হয়। অন্যরা শত চেষ্টা করেও সহযোগিতা পাননা। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কুয়ালালামপুরে লাইনে দাড়িয়ে দেশে ফিরে আসার চেষ্টারত রামুর আবদুল খালেকেরও। তাদের দাবি শ্রমিকদের সাথে দূতাবাসের কর্মকর্তারা কথা পর্যন্ত বলতে চাননা।
জেলা প্রশাসনের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এ ধরনের ৩ হাজারের অধিক কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার লোক সমুদ্র পথে মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজ না পেয়ে দেশে ফেরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। তাদের নেই কোন পাসপোর্ট নেই কোন বৈধ কাগজপত্র। সাগর পথে মালয়েশিয়া গিয়ে দেশে ফিরতে না পেরে চরম বিপাকে পড়েছে কক্সবাজারের প্রায় ৩ হাজার অবৈধ প্রবাসি। তাদের বেশিরভাগ উখিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, রামুর বাসিন্দা।
ভাগ্যের পরির্বতনে অবৈধ পথে মালয়েশিয়া গিয়ে অনেকে সাময়িক কাজ যোগাড় করতে পারলেও বর্তমানে তাদের আবস্থা চলছে খেয়ে না খেয়ে। অনেকে অসুস্থ হয়ে পাসপোর্ট না থাকার কারনে চিকিৎসা পর্যন্ত করতে পারছেনা। কিন্তু তাদের সঠিক কাগজপত্র না থাকায় দেশে ফিরতে ও পারছেনা। তাদেরকে দেশে ফেরত আনতে মরিয়া স্বজনেরা। সমস্ত নিয়ম মেনে তারা মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে কাগজপত্র পাঠালেও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারনে সহজে ফিরতে পারছেনা ভাগ্যবিড়ম্বনার শিকার অসহায় আটকে পড়া প্রবাসিরা।
মালয়েশিয়ায় আটকে পড়াদের কয়েকজনের স্বজন জানান, দূতাবাসের চাহিদা অনুযায়ি ফেরত আসতে আগ্রহীদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পিতা, মাতা, ফুফুর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ভূমিহীন সনদ, খতিয়ানের ফটোকপি, বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি, চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয়তা সনদপত্র আবেদনে সংযুক্তি দিয়ে আবেদন করেছেন এবং পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চকে তদন্তের প্রতিবেদন ও অনলাইনে পাঠিয়েয়েই।
সংশ্লিষ্টরা তদন্ত করে সঠিক তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে পাঠায়। এছাড়া আবেদনের সকল কাগজপত্র স্ব স্ব উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বরাবরে যাচাই-বাছাই করেও পাঠানো হয়। উভয় দপ্তরের তদন্তের পর সমন্বয় করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে এবং মালয়েশিয়ান দূতাবাসে। নকে দূতাবাসে বেশ কয়েকবার গিয়ে সহযোগিতা না পেয়ে হতাশ মনে ফিরে এসেছে। ফলে আটকে পড়াদের কষ্ট এবং টেনশন বাড়ছে। পাশাপাশি স্বদেশে পরিবার পরিজনও দিন কাটাচ্ছে নানা উৎকন্ঠায়।
সূত্রমতে, মালয়েশিয়ার পেনাং, কুয়ালালামপুর, কুচিং, কোটা কিনাবুলু, মালাক্কা, লংকাউই, ইপু, তামান নেগ্রাসহ বিভিন্ন শহরে কক্সবাজারের ১০ হাজারের অধিক অবৈধ প্রবাসি রয়েছে। যারা সাগর পথে দালালের খপ্পরে পড়ে ৬/৭ বছর আগে সেখানে গিয়ে বৈধ কাগজপত্র না থাকার কারনে দেশে ফিরতে পারছেনা। অনেকে স্বজনদের সাথে দীর্ঘদিন যোগাযোগ ও করতে পারছেনা। যারা যোগাযোগ করছে তাদের ফিরে আসার আকুতি তীব্র বলে জানা গেছে।
স্বজনদের চরম অনিশ্চয়তার মাঝে উদ্বিগ্নতায় দিন কাটছে । আটকে পড়া জেলার ভাগ্যবিড়ম্বনার শিকার প্রায় ৩ হাজার শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অবস্থিত দূতাবাসের কর্মকর্তাদের শ্রমিকবান্ধব এবং হয়রানীমুক্ত হওয়ার দাবি জানিয়েছেন আটকে পড়াদের স্বজনরা। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা।
পাঠকের মতামত: